সুগন্ধিযুক্ত ঔষধি পাতা তেজপাতা। এ পাতা স্যুপ, পায়েস, পোলাও ও অন্যান্য সিদ্ধ জাতীয় খাবারে সুগন্ধ যোগ করতে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন গ্রীকে ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরিতে তেজপাতা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
আসুন জেনে নেই এর ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে…
চুলের বৃদ্ধি ও খুশকি তাড়ায়: খুশকি ও চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে বিপাকে আছেন? চুলের যত্নে তেজপাতায় রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কয়েকটি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। কিছুক্ষণ ঠান্ডা হতে দিন। এবার এ পানি দিয়ে চুল ও স্কাল্প ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর এটি করবেন। মাথার ত্বক চুলকাচ্ছে? তেজপাতা বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মেশান। স্কাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: একটি গবেষণায় দেখা যায়, দিনে অন্তত দুবার তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে। এটি প্রমাণ হয়েছে যে, তেজপাতায় থাকা উপাদান ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন তাদের জন্যেও তেজপাতা বেশ উপকারী।
হজমে সাহায্য করে: কোষ্ঠকাঠিন্য? তেজপাতা আপনার স্বাভাবিক হজমশক্তি ফিরিয়ে আনবে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা কমায় ও হজম রস তৈরিতে এটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। তেজপাতায় থাকা এনজাইম দ্রুত খাবার ভাঙতে পারে। ফলে যারা অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি অনেক উপকারী।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: তেজপাতায় রয়েছে রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ব্যথা উপশম করে: তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথাব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা এমনকি বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। তেজপাতা ও রেড়ির পাতার (ক্যাস্টর) পেস্ট আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই ব্যথা কমে যাবে। এ ছাড়া পাতার তেল কপালে ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা থাকবে না।
ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে: কিছু গবেষণায় দেখা যায়, তেজপাতা ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করে। ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যানসার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
ক্ষত নিরাময় করে: তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি ক্যান্ডিডার মতো ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
গলা খুশখুশ ও কাঁশি: আপনি যদি ঠান্ডায় আক্রান্ত হন ও কাঁশির সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে এটি আপনাকে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে। ৪-৫টি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে বুক মুছুন। কয়েকবার এটি করুন। আর খেয়াল রাখবেন পানি যেনো খুব বেশি গরম না হয়।
কিডনির পাথরের চিকিৎসায়: একটি গবেষণা অনুযায়ী, তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।
উদ্বিগ্নতা ও চাপ কমায়: যদি দিনের শেষে আপনার মনমেজাজ ভালো না লাগে তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি আপনার স্নায়ু শান্ত করে ও উদ্বিগ্নতা কমায়। এমনকি ভালো ঘুমের জন্যও উপকারী।
সতর্কতা: তেজপাতা গর্ভবতী মা ও সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটাতে পারে। এ ছাড়া সার্জারি রোগীদের দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয়। কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।